ধর্ম

আল্লাহর প্রতিটি দিনই সুন্দার উপহার ও শ্রেষ্ঠ উপহার

পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘তিনিই তোমাদের কল্যাণে নিয়োজিত করেছেন রজনী, দিবস, সূর্য এবং চন্দ্রকে; আর নক্ষত্ররাজিও অধীন আছে তাঁরই বিধানের; অবশ্যই এতে বোধশক্তিসম্পন্ন সম্প্রদায়ের জন্য আছে নিদর্শন। ’ (সুরা : নাহল, আয়াত : ১২) অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আসমান ও জমিনের সৃষ্টি এবং রাত ও দিনের বিবর্তনের মধ্যে আছে বিবেকসম্পন্নদের জন্য বহু নির্দশন। ’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৯০)

দিন শেষে রাত আসে, রাতের পর আবারও নতুন সূর্যের উদয় ঘটে। চন্দ্র-সূর্য নিজ নিজ কক্ষপথে নিরলসভাবে ছুটে চলে। রাত-দিনের আবর্তনে, চন্দ্র-সূর্যের ছুটে চলার নিয়ন্ত্রক একমাত্র মহান আল্লাহ। এতে মহান আল্লাহর অসংখ্য নির্দশন লুকিয়ে আছে।

দিন-রাতের আবর্তনে সৃষ্টির অনেক কল্যাণ নিহিত আছে। যেমন মুমিনের ইবাদতের দিক থেকে চিন্তা করলে দিন ও রাতের বিভিন্ন অংশ মুমিনের বিশেষ বিশেষ ইবাদতের সঙ্গে সম্পৃক্ত, ওই সময় আসার আগে মুমিনের ওপর ওই ইবাদত ফরজ হয় না। আবার নির্দিষ্ট সময় অতিবাহিত হওয়ার আগেই ওই ইবাদতগুলো পালন করে নিতে হয়। আবার কিছু ইবাদত আছে, যেগুলো সাপ্তাহিক, যেমন—জুমার নামাজ, সোম ও বৃহস্পতিবারের রোজা ইত্যাদি। আবার কিছু ইবাদত মাসিক, যেমন—আইয়ামে বিজের রোজা। কিছু ইবাদত বাৎসরিক, যেমন—রমজানের রোজা, দুই ঈদ, হজ ইত্যাদি। দিন ও রাতের পরিবর্তন না ঘটলে, সপ্তাহ, মাস ও বছরের হিসাব সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকলে এই ইবাদতগুলো পালন করা জটিল হয়ে পড়ত।

আবার মহান আল্লাহ মানুষের জন্য যেসব ফসল দান করেন, সেগুলো বছরের বিভিন্ন মৌসুমের সঙ্গে সম্পৃক্ত, সব মৌসুমে সব ফসল পাওয়া যায় না, এমনকি নদী-সাগরে সব মৌসুমে সব মাছ ব্যাপকভাবে পাওয়া যায় না। বোঝা গেল, সময়ের সঙ্গে মানুষের রিজিকের সম্পর্ক রয়েছে। যদি মানুষ বছরের হিসাব না রাখতে জানত, তাহলে ফসল ইত্যাদি থেকে উপকৃত হওয়াও কঠিন হয়ে পড়ত। এক কথায় বলতে গেলে মহান আল্লাহ সময়ের স্রোতে মানুষের বহু কল্যাণ রেখে দিয়েছেন, যা থেকে মানুষ তাদের রবের অনুগ্রহ সন্ধান করতে পারে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে,

‘আর আমি রাত ও দিনকে করেছি দুটো নিদর্শন। অতঃপর মুছে দিয়েছি রাতের নিদর্শন এবং দিনের নিদর্শনকে করেছি আলোকময়, যাতে তোমরা তোমাদের রবের অনুগ্রহ সন্ধান করতে পারো এবং যাতে তোমরা বর্ষসংখ্যা ও হিসাব জানতে পারো। আর আমি প্রত্যেক বিষয় বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেছি। ’ (সুরা : বনি ইসরাঈল, আয়াত : ১২)

৩৬০ দিন পূর্ণ হলে একটি সন পূর্ণতা লাভ করে। এমনিভাবে অন্যান্য হিসাব-নিকাশও দিবারাত্রির গমনাগমনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। দিবারাত্রির এই পরিবর্তন না হলে মজুরের মজুরি, চাকুরের চাকরি এবং লেনদেনের মেয়াদ নির্দিষ্ট করা সুকঠিন হয়ে যাবে। এর বাইরে ইবাদতের বিষয়গুলো তো আগেই উল্লেখ করা হয়েছে।

সুতরাং দিন-রাতের আবর্তনে সপ্তাহ, সপ্তাহের আবর্তনে মাস, মাসের আবর্তনে বছর, এমনিভাবে যুগ, শতাব্দী ইত্যাদি সব কিছুই মহান আল্লাহ যথার্থ সৃষ্টি করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘তিনিই সূর্যকে করেছেন দীপ্তিময় এবং চাঁদকে আলোময় আর তার জন্য নির্ধারণ করেছেন বিভিন্ন মঞ্জিল, যাতে তোমরা জানতে পারো বছরের গণনা এবং (সময়ের) হিসাব। আল্লাহ এগুলো অবশ্যই যথার্থভাবে সৃষ্টি করেছেন। জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য তিনি আয়াতসমূহ বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেন। ’ (সুরা : ইউনুস, আয়াত : ৫)

আর এগুলোর ধারাবাহিকতাই আমাদের কিয়ামতের দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। দুনিয়ার জীবনের ক্ষেত্রে প্রতিটি দিন ও বছর যেমন আমাদের জন্য আল্লাহর উপহার, আমরা এগুলোকে কাজে লাগিয়ে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে সচেষ্ট হতে পারি।

সংশ্লিষ্ট খবরগুলো

চাইলে পড়তে পারেন
Close
Back to top button