ফ্রান্সে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়া বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে আনতে ৪০ হাজার পুলিশ মোতায়েন করার পরিকল্পনা করছে। দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গেরার্ড ডারমানিন আজ বৃহস্পতিবার একথা ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, সমগ্র ফ্রান্সে এসব পুলিশ মোতায়েন করা হবে। আর রাজধানী প্যারিসে মোতায়েন করা হবে পাঁচ হাজার পুলিশ। আজ বৃহস্পতিবার রাতেই পুলিশ মোতায়েন সম্পন্ন হবে বলে জানানো হয়েছে। গতকাল মাত্র ৯ হাজার পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল। তবে তিনি বলেন, এখনই জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হচ্ছে না। ইতোমধ্যেই ১৮০ ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
ট্রাফিক আইন ভঙ্গের জন্য ফরাসি পুলিশ উত্তর আফ্রিকান বংশোদ্ভূত এক যুবককে গুলি করে হত্যা করার পর এই বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। জানা গেছে, প্যারিসের রাস্তায় হলুদ মার্সিডিজ চালাচ্ছিলেন নাহেল এম। ট্র্যাফিক আইন ভাঙার অভিযোগে পুলিশ তাকে খুব কাছ থেকে গুলি করে মারে। তারপরই বুধবার শুরু হয় প্রতিবাদ। প্যারিসের শহরতলিতে রাস্তায় নেমে মানুষ আবর্জনা ফেলার বিনগুলোতে আগুন ধরিয়ে দেয়। একটি জায়গায় বাসেও আগুন লাগানো হয়। একটি শহরে বেশ কিছু গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। পুলিশ গেলে তাদের লক্ষ্য করে পাথর ছোড়া হয়।
এরপর বিক্ষোভ ছড়াতে থাকে। শুধু প্যারিস নয়, ফ্রান্সের অনেক শহরে পথে নামে বিক্ষোভকারীরা। ২৪ জন পুলিশ কর্মী আহত হন।
অনেকে আশঙ্কা করছে, এ ঘটনার জের ধরে ২০০৫ সালের মতো দাঙ্গা সৃষ্টি হতে পারে। ওই সময় পুলিশের ধাওয়া খেয়ে দুই কৃষ্ণাঙ্গ বালক নিহত হয়। এর জের ধরে ব্যাপক দাঙ্গার সৃষ্টি হয়। এতে প্রায় ১০ হাজার গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। আর ছয় হাজার লোককে গ্রেফতার করা হয়েছিল।
কী হয়েছিল?
পুলিশ প্রথমে জানিয়েছিল, ১৭ বছর বয়সী এক যুবক পুলিশের এক অফিসারকে লক্ষ্য করে গাড়ি চালিয়ে দিয়েছিল। তাকে থামানোর জন্য গুলি চালানো হয়।
কিন্তু পরে সামাজিক মাধ্যমে প্রচুর ভিডিও পোস্ট করা হয়। তাতে দেখা যায়, গাড়ি থেমে আছে। দুই পুলিশকর্মী ওই গাড়ির পাশে। একজন রিভলভার তাক করে আছে। একটা গলার আওয়াজ ভেসে আসে, মাথায় গুলি করব। গাড়ি নিয়ে যুবক পালাতে গেলে পুলিশ গুলি চালায়। যুবক মারা যায়।
নেহাল ছিল ডেলিভারি ড্রাইভার।
নিন্দার ঝড়
ফরাসি প্রেসিডেন্ট মাক্রোঁ বলেছেন, 'এই ঘটনা মেনে নেয়া যায় না। এটা ক্ষমার অযোগ্য। এক যুবকের এভাবে মৃত্যুকে কোনো যুক্তি দিয়েই ব্যাখ্যা করা যাবে না।'
ফুটবল সুপারস্টার কিলায়ান এমবাপ্পে এই ঘটনায় দুঃখ ও ক্ষোভপ্রকাশ করেছেন।
সরকারের তরফ থেকে বলা হয়েছে, পুলিশ যেন মাথা ঠান্ডা রাখে। প্রধানমন্ত্রী পার্লামেন্টে বলেছেন, পুলিশ আইন মানেনি।
কাঠগড়ায় পুলিশ
এই ঘটনার পর ফ্রান্সের পুলিশকে আবার কাঠগড়ায় তুলছে মানবাধিকার সংগঠনগুলি। তারা বেশ কিছুদিন ধরেই বলে আসছে, শহরতলির কম আয়ের মানুষ এবং জাতিগত সংখ্যালঘুদের উপর পুলিশের আচরণ একেবারেই সমর্থনযোগ্য নয়।
গতবছর ট্র্যাফিক চেকের জন্য না থামার অপরাধে ১৩জনকে মেরেছে পুলিশ। ২০১৭ সালে পুলিশকে ট্রাফিক আইন ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ব্যবহার করার অনুমতি দেয়া হয়েছে। পুলিশকে এই অনুমতি দেয়া ঠিক হয়েছে কিনা, তানিয়ে ফ্রান্সে বিতর্ক শুরু হয়েছে।