আমতলী প্রতিনিধিঃ
আমতলী উপজেলার গুলিশাখালী ইউনিয়নে জেলেদের চাল ওজনে কম দেয়ার অভিযোগ উঠেছে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে। সরকারীভাবে প্রত্যেক জেলেদের জন্য ৫৬ কেজি বরাদ্দ থাকলেও দেয়া হচ্ছে ৪৫ কেজি। এতে জেলেদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে। দ্রুত অনিয়মের সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির দাবী করেছেন ভুক্তভোগী জেলেরা। জানাগেছে, মৎস্য সম্পদ রক্ষায় ৬৫ দিন সাগরে মাছ আহরণ নিষিদ্ধ করেছে সরকার। এ নিষিদ্ধ সময়ে জেলেদের পুর্নবাসনের জন্য ত্রাণ ও পুর্নবাসন মন্ত্রনালয় প্রত্যেক জেলেদের জন্য ৮৬ কেজি চাল বরাদ্দ দিয়েছেন। প্রথম ধাপে ৫৬ কেজি ও দ্বিতীয় ধাপে ৩০ কেজি চাল বিতরন করা কথা। প্রথম ধাপের চাল বিতরন কার্যক্রম চলছে। শনিবার ট্যাগ অফিসার উপজেলা প্রাণী সম্পদ সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ডাঃ রোকোনুজ্জামানের অনুপস্থিতিতে গুলিশাখালী ইউনিয়নের এক হাজার ৬’শ ৪১ জেলেদের মাঝে প্রথম ধাপের চাল সংশ্লিষ্টরা বিতরন করছিল। জেলেরা অভিযোগ করেন, সরকারীভাবে ৫৬ কেজি চাল দেয়ার কথা থাকলেও ইউপি সদস্যরা ও ইউনিয়ন সচিব জাকির হোসেন ৪৫ কেজি করে চাল দিচ্ছেন। তারা ৫৬ কেজির তালিকায় স্বাক্ষর রেখে ৫০ কেজির একটি বস্তা দিচ্ছেন। ওই বস্তায়ও চাল কম হচ্ছে। প্রত্যেক বস্তায় ৪ থেকে ৫ কেজি চাল ঘটতি রয়েছে। আমরা এর প্রতিবাদ করতে তারা বলেন, এই চাল নিলে নাও, নইলে চাল দেয়া হবে না। অপর দিকে জেলেদের কাছ থেকে চাল পরিবহন বাবদ ৫০ টাকা করে আদায় করছে বলে অভিযোগ করেন জেলেরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুকে কয়েকজন বলেন, চাল আনার পরে চেয়ারম্যানের লোকজন বোঙ্গা মেরে বস্তা থেকে চাল সরিয়েছে। ফলে ওজনে চাল কম হচ্ছে। জেলে নজরুল মুন্সি বলেন, স্বাক্ষর নিলো ৫৬ কেজির কিন্তু চাল দিয়েছেন ৫০ কেজির একটি বস্তা। ওজন করে দেখেছি ওই বস্তায় চার কেজি চাল কম। আমড়াগাছিয়া আদর্শ গুচ্ছগ্রামের জেলে শহিদুল ইসলাম বলেন, ৫০ কেজির এক বস্তা চাল পেয়েছি। ওই বস্তায় পাঁচ কেজি চাল ঘাটতি রয়েছে। জেলে আবুল হোসেন ও ওসমান গনি বলেন, ৫৬ কেজির স্বাক্ষর রেখেছে ৫০ কেজির একটি বস্তা দিয়েছেন। ওজন করে দেখেছি, তাতেও ৫ কেজি কম। শনিবার সরেজমিনে ঘুরে দেখাগেছে, গুলিশাখালী ইউনিয়ন পরিষদে জেলেদের তালিকায় ৫৬ কেজির স্বাক্ষর রেখে ৫০ কেজির বস্তা দেয়া হয়। ওই ৫০ কেজির বস্তায়ও ৪ থেকে ৫ কেজি কম রয়েছে। চাল কম দেয়ায় জেলেদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে। গুলিশাখালী ইউনিয়ন পরিষদ সচিব মোঃ জাকির হোসেন ওজনে চাল কম দেয়ার কথা অস্বীকার করে বলেন, সঠিকমত চাল দেয়া হচ্ছে। ৫০ কেজির বস্তায় চাল কম থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, খাদ্য গুদাম থেকে যে বস্তা দিয়েছে , ওই চাল জেলেদের দিয়েছি। ওজনে কম দিলে খাদ্য গুদাম কর্তৃপক্ষ দিয়েছেন। তবে ৫০ কেজির একটি বস্তায় ৫৬ কেজি হয় কিভাবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেননি? আমতলী উপজেলা খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা (এলএসডি) হুমায়ুন কবির বলেন, গুদাম থেকে ৫০ কেজির বস্তা সরবরাহ করা হয়েছে। চাল বস্তায় কম হলে ইউনিয়ন পরিষদ সংশ্লিষ্টরাই ভালো জানেন। গুলিশাখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এ্যাড. এইচএম মনিরুল ইসলাম মনি চাল কম দেয়ার কথা অস্বীকার করে বলেন, আমি অসুস্থ্য পটুয়াখালীতে আছি। ইউপি সচিব জাকির হোসেন ও ওয়ার্ড ইউপি সদস্যরা চাল বিতরন করেছেন। ট্যাগ অফিসার উপজেলা প্রাণী সম্পদ সম্প্রাসরণ কর্মকর্তা ডাঃ রোকোনুজ্জামান বলেন, আমার জানামতে সঠিকমতই চাল বিতরন করছে। তবে চাল কম দেয়ার সত্যতা পেলে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে। আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ আশরাফুল আলম বলেন, বিষয়টি আমি জেনেছি। তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।