প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, গত চৌদ্দ বছর সাংবাদিকরা যতটা স্বাধীনতা পেয়েছে, এই স্বাধীনতা কখনো কেউ ভোগ করেনি। সমালোচনা যেন আমাদের দেশের কল্যাণে হয়, দেশের ক্ষতির জন্য না হয়। আমাদের দেশে কিছু বুদ্ধিজীবী আছে, যারা বুদ্ধি বেচে জীবিকা নির্বাহ করে।
শেখ হাসিনা বলেন, যতই সমালোচনা করেন, সমালোচনা থেকে যদি কোনো সংশোধন করা লাগে আমরা সেটা করে নেব। এবং আমরা সেটা করে থাকি। সেখানে আপনাদেরও কিছুটা দায়িত্ব আছে। স্বাধীনতা ভোগ করবেন, সঙ্গে দায়িত্ববোধও থাকতে হবে। দেশ ও জাতির জন্য কর্তব্যবোধ থাকতে হবে।
অসুস্থ, অসচ্ছল সাংবাদিক এবং নিহত সাংবাদিক পরিবারের সদস্যদের অনুকূলে আর্থিক সহায়তার চেক হস্তান্তর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি কথা বলেন। সোমবার (১০ জুলাই) সকালে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের করবী হলে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
তিনি বলেন, ২০০১ সালের কথা একবার চিন্তা করেন, খালেদা জিয়া যখন প্রথম সরকারে এলো, দক্ষিণাঞ্চলে কি কোনো সাংবাদিক যেতে পেরেছিল? কোনো সাংবাদিক যেতে পারেনি। সেখানে এত অত্যাচার করেছিল। সাংবাদিক নিষিদ্ধ ছিল। তাদের অপকর্ম কোনো পত্রিকা লিখতেই পারত না। যে লিখত তাকে খেসারত দিতে হত। তখন স্বাধীনতাটা ছিল কোথায়? যতটা স্বাধীনতা আওয়ামী লীগ সরকার দিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সরকার গঠন করার সময় সংবাদপত্র ছিল হাতেগোনা কয়েকটি। তখন অবাধে সংবাদ যাতে প্রকাশিত হতে পারে সে ব্যবস্থা করেছি। প্রথমে তিনটি প্রাইভেট চ্যানেলের অনুমতি দিয়েছি, তারপর এটি বাড়ানো হয়েছে। সেই সময় অনেকে বাধা দিয়েছিল যে, প্রাইভেটে টিভি চ্যানেল দেওয়া ঠিক হবে কি না? আমি যখনই যে কাজ করেছি সেখানে লক্ষ্য ছিল কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা। তখন আমি বলেছিলাম, যত বেশি টেলিভিশন দিতে পারব সেখানে সাংবাদিক থেকে শুরু করে বহু ধরনের মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। সাংবাদিক, শিল্পী, টেকনিশিয়ানসহ বহু ধরনের মানুষ কাজ পাবে তাদের জীবন চলতে পারবে। সেভাবে আমরা টেলিভিশনটা উন্মুক্ত করে দেই।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও একসময় সাংবাদিকতা করেছেন। তার আত্মজীবনী পড়লে আপনারা সেটি জানতে পারবেন। শুধু সাংবাদিকতা নয়, পত্রিকা বিক্রির কাজও তিনি করেছেন। সেদিক থেকে বিবেচনা করলে আমি আপনাদের পরিবারের একজন সদস্য।
তিনি বলেন, `৯৬ সালে আমি যখন সরকারে গঠন করি তখন মাত্র একটি টেলিভিশন ছিল, সেটাও আবার সরকারি টেলিভিশন। সংবাদপত্র ছিল কয়েকটি। স্বাধীনতার সময় অনেক সংবাদপত্র হানাদার বাহিনী পুড়িয়ে দিয়েছিল। জাতির পিতার লক্ষ্য ছিল এদেশের জনগণের যেন মত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকে।
সরকারপ্রধান বলেন, আমরাই বেসরকারি খাতের জন্য বিশেষ আইন করে বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণ করে অল্প সময়ের মধ্যে ৪৩০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছিলাম। দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এসে দেখি সেখান থেকে কমে ৩৮০০ মেগাওয়াট হয়ে গেছে। সেখান থেকে আমরা ২৫ হাজার মেগাওয়াট উৎপাদন করতে পেরেছি। আমরা যদি বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা না নিতাম তাহলে চিন্তা করে দেখেন সেটা ৩৮০০ মেগাওয়াটে থাকত। হয়ত ১০০-২০০ করে বাড়ত। এখনো অনেকে অনেক সমালোচনা করে। আমি মনে করি সেই সমালোচনাটা গঠনমূলক হওয়া উচিত। শুধু বলার জন্য বলা না। বিরোধীদল তো বলবেই, তারা সারাদিন কথা বলে, টক শো করে, টক শোতে ইচ্ছেমতো বলে যাচ্ছে, যা খুশি তাই বলে যাচ্ছে, কথা বলার পরে বলবে কথা বলার স্বাধীনতা দেয়নি। স্বাধীনতা ছিল কখন? আইয়ুব খানের আমলে ছিল? জিয়াউর রহমানের আমলে ছিল? এরশাদের আমলে ছিল?
সাংবাদিকদের আবাসনের বিশেষ প্রকল্পের উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেককে প্লট দেওয়া হয়েছে, আবার অনেকে বিক্রিও করে দিয়েছে। সরকারিভাবে আমরা ফ্ল্যাট তৈরি করেছি, কিছু টাকা জমা দিয়ে, কোনোটা ১৬ বছর, কোনোটা ২৬ বছর ধীরে ধীরে টাকা জমা দিয়ে ফ্ল্যাটের মালিক হওয়া যায়। সেভাবে আমরা অনেক ফ্ল্যাট তৈরি করেছি। সাংবাদিকরা চাইলে আমরা সেটা ব্যবস্থা করতে পারি। এদেশে কোনো মানুষ ভূমিহীন থাকবে না, গৃহহীন থাকবে না। আমি সাংবাদিকদের বলব, তারা যদি ফ্ল্যাট কিনতে চান, আমরা বিক্রি করব।
তিনি আরও বলেন, ন্যাম সম্মেলন কেন্দ্রের জন্য আমরা যখন ফ্ল্যাট তৈরি করি, তখনই আমাদের লক্ষ্য ছিল যে, সেটি হওয়ার পর ফ্ল্যাটগুলো আমাদের কবি, শিল্পী, সাহিত্যিক ও সাংবাদিক...। আসলে তাদের চাকরির কোনো স্থায়িত্ব থাকে না, বয়স্ক বা অসুস্থ হয়ে পড়লে তাদের কোনো সুযোগই থাকে না। সরকারি চাকরিতে অবসর ভাতা পাওয়া যায়। আমাদের রাজনীতিবিদদের জন্য কিছু থাকে না, সাংবাদিকদের জন্য কিছু থাকে না, এটা বাস্তব। এখন গণভবনে আছি ভালো কথা, তারপর কোথায় উঠব? আমি নিজের জন্য চিন্তা করি না, সবার জন্যই ভাবি। আমি আপনাদেরকে (সাংবাদিক) বলব আপনারা যদি কেউ ফ্ল্যাট কিনতে চান তাহলে কিস্তিতে দেব, সেভাবে আমরা ফ্ল্যাট তৈরি করে দিচ্ছি। যদি নিজেরাই ঘর করতে চান তাহলে একটা জায়গা নির্দিষ্ট করে দেব।
পরে অসুস্থ, অসচ্ছল সাংবাদিক এবং নিহত সাংবাদিক পরিবারের সদস্যদের অনুকূলে আর্থিক সহায়তার চেক হস্তান্তর করেন প্রধানমন্ত্রী। এসময় তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদসহ সাংবাদিক নেতারা উপস্থিত ছিলেন।