আন্তর্জাতিক

বিমান দুর্ঘটনার ৪০ দিন পর জঙ্গল থেকে উদ্ধার ৪ জীবিত শিশু

এ যেন কল্পনাকে ছাপিয়ে যাওয়া গল্প। কেউ বলে রূপকথা, কেউ বলে প্রকৃতির শিক্ষা। কলম্বিয়ার দক্ষিণাঞ্চলের আমাজন জঙ্গলে একটি প্রাইভেট বিমান বিধ্বস্ত হয় ২০২৩ সালের ১ মে। এই ঘটনার ৪০ দিন পর ঘটনাস্থল থেকে ৪ জীবিত শিশুকে উদ্ধার করা হয়েছে। অনেকেই বলছেন, এটা আল্লাহর কুদরত ছাড়া আর কিছুই নয়।

বিমান দুর্ঘটনার সংবাদ রাডারে ধরা পড়লেও নির্দিষ্ট স্থানটি চিহ্নিত করা সম্ভব হচ্ছিল না। কলম্বিয়ার সরকারের পক্ষ থেকে  প্যারা ট্রুপার ও সেনাবাহিনীর বিশেষ স্কোয়াড নামানো হয় জঙ্গলে।  কয়েকদিন পর বিমানের ধ্বংসাবশেষের সন্ধান মেলে। উদ্ধার করা হয় পাইলট সহ এক দম্পতির মৃত এবং পোড়া লাশ। 

কিন্তু বিমানটির মালিকানা কেউ দাবী না করায় কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত হতে পারছিলো না যে বিমানটিতে মোট কতজন যাত্রী ছিল। তবে তাদের ধারণা ছিল যে, প্লেনে আরও যাত্রী থাকতে পারে। সেই ধারণা থেকে জঙ্গলে ১০০ জনের অতিরিক্ত স্কোয়াড নামানো হয়। 

হেলিকপ্টারের সাহায্যে বিশেষ তল্লাশী চালানো হয়। লাউড স্পিকারে আঞ্চলিক ভাষায় বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু কিছুতেই কাজ হচ্ছিল না। আবার সেনাবাহিনী হাল ছেড়ে দিতেও রাজী নয়। কারণ  জঙ্গলের কাদায় মানুষের পায়ের ছাপ এবং ফলমূল পাওয়া গেছে যেগুলিতে মানুষের দাঁতের কামড়ের চিহ্ন ছিল। 

আরও ৫০ জনের অনুসন্ধানকারী দলের সঙ্গে নামানো হয় বিশেষ ডগ স্কোয়াড। এর পরেও কাজ না হওয়ায় গহীন জঙ্গলে বসবাসকারী আদিবাসীদের সাহায্য চাওয়া হয়। অবশেষে আদিবাসীদের সহায়তায় জঙ্গলের  দুর্গম থেকে অলৌকিকভাবে বেঁচে যাওয়া ১৩, ১১, ৫ এবং ১ বছর বয়সী চার শিশুকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। 

৪০ দিন তারা লতাপাতা ও ফলমূল খেয়ে বেঁচে ছিল। বেঁচে থাকার সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছে তাদের ১৩ বছর বয়সী বোন লেজলি। লেজলিকে তার আদিবাসী দাদি ফাতিমা ভাস্কোয়েজ  শিখিয়েছিলেন কিভাবে মাছ ধরতে হয়, জঙ্গলের কোন ধরণের  ফলমূল এবং গুল্ম খাবার উপযোগী, আর কোনগুলো বিষাক্ত। কিভাবে হিংস্র জন্তু জানোয়ার কিংবা সাপের কবল থেকে নিজেকে রক্ষা করতে হয়। দাদির উপদেশ অনুসরণ করে সে তার ছোট ভাইবোনদের রক্ষা করেছে। 

উদ্ধার করার পর শিশুদেরকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের অবস্থা এখনও স্বাভাবিক না হলেও ঝুঁকিমুক্ত। তবে উদ্ধারকারী দলের একটি কুকুরকে এখনও পাওয়া যাচ্ছে না। ধারণা করা হচ্ছে উইলসন নামের বেলজিয়ান এই শেফার্ড শিশুদেরকে  পাহাড়া দিয়েছে। 

শিশুরাও কর্মকর্তাদের বলেছে যে, তারা কয়েকদিন একটি কুকুরের সঙ্গে ঘুমিয়েছে। উদ্ধারকারী দলের নেতা বলেছেন, কুকুর যে মানুষের বিশ্বস্ত বন্ধু সেটি আবার নতুন করে প্রমাণ হলো। তিনি ৬ বছর বয়সী এই বেলজিয়ান শেফার্ডকে জীবিত উদ্ধার করার জন্য তৎপরতা চালাচ্ছেন। 

কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গোস্তাভো প্যাট্রো উদ্ধারকাজে সহায়তা করার জন্য আদিবাসী সহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। বলেছেন, জঙ্গল তাদের বাঁচিয়েছে। গতকাল যারা ছিল জঙ্গলের সন্তান,  আজ তারা কলম্বিয়ার ঘরের  সন্তান। 

এপি নিউজ এবং দ্য নিউ ইয়র্ক পোস্ট অবলম্বনে—সাংবাদিক আসলাম আহমাদ খান

সংশ্লিষ্ট খবরগুলো

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button