গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলের বিমান হামলায় যেসব ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন তাদের অনেকের মরদেহ আইসক্রিমের ফ্রিজারে সংরক্ষণ করা হচ্ছে। কারণ মরদেহ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া এখন খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। এছাড়া মরদেহ সমাহিত করার মতো পর্যাপ্ত জায়গাও কবরস্থানগুলোতে নেই।
গত ৭ অক্টোবর সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস ইসরায়েলে হামলা চালানোর ঠিক পরপরই গাজা উপত্যকা লক্ষ্য করে নির্বিচার বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েল। যা গত ৯ দিন ধরে অব্যাহতভাবে চলছে। গত কয়েক দশকে গাজার উপর ইসরায়েল যত হামলা চালিয়েছে সেগুলোর মধ্যে এবারের হামলা সবচেয়ে তীব্র।
দেঈর আল-বালাহর সুহাদা আল-আকসা হাসপাতালের চিকিৎসক ইয়াসের আলী বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, ‘হাসপাতালের মর্গে শুধুমাত্র ১০টি মরদেহ রাখা যায়। এ কারণে আইসক্রিমের ফ্যাক্টরি থেকে আইসক্রিমের ফ্রিজার এনেছি যেন অসংখ্য শহীদকে রাখা যায়।’
যেসব গাড়িতে এসব মরদেহ রাখা হয়েছে সেগুলোতে তখনো মুখে হাস্যোজ্জল শিশুদের আইসক্রিম খাওয়ার ছবি শোভা পাচ্ছিল। এসব ফ্রিজার মূলত সুপারমার্কেটগুলোতে আইসক্রিম সরবরাহ করত। এখন এগুলো হামাস-ইসরায়েলের বিপর্যয়কারী যুদ্ধে নিহত মানুষদের জন্য অস্থায়ী মর্গ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, যুদ্ধ শুরুর পর ইসরায়েলের বিমান হামলায় এখন পর্যন্ত ২ হাজার ৪০০ ফিলিস্তিনির মৃত্যু হয়েছে। যার বেশিরভাগই নারী ও শিশু। এছাড়া আহত হয়েছেন আরও ১০ হাজার মানুষ। এত সংখ্যক মানুষ আহত হওয়ায় এখন হাসপাতালের চিকিৎসা সরঞ্জাম ফুরিয়ে আসছে। ফলে চিকিৎসকরা আহতদের অতি প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিতেও হিমশিম খাচ্ছেন।
অস্থায়ী মর্গের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা আলী নামের এক ব্যক্তি বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, ‘এসব ফ্রিজার থাকা সত্ত্বেও, এই হাসপাতালের প্রধান মর্গসহ মরদেহ সংরক্ষণের সবকিছু পূর্ণ হয়ে গেছে। ২০-৩০টি মরদেহ তাঁবুর ভেতরও রাখা হয়েছে।’ তিনি রয়টার্সের প্রতিনিধিকে একটি ফ্রিজারের দরজা খুলে দেখিয়েছেন কীভাবে কাফনে মোড়ানো কয়েকটি মরদেহ একসঙ্গে রাখা হয়েছে।
তিনি আরও বলেছেন, ‘গাজা উপত্যকা সংকটের মধ্যে আছে। যদি এ যুদ্ধ এভাবে চলতে থাকে আমরা মৃতদের কবর দিতে পারব না। কবরস্থানগুলো ইতিমধ্যে ভরে গেছে। নিহতদের কবর দিতে আমাদের নতুন জায়গার প্রয়োজন।’
আলী আরও জানিয়েছেন, নিহতদের আত্মীয়-স্বজনরা এখনো এসব মরদেহ নিতে আসেননি। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে এগুলো বিকৃত হয়ে যাচ্ছে। এদিকে স্থান সংকুলান না হওয়ায় নিহত ফিলিস্তিনিদের জন্য এখন বিভিন্ন জায়গায় গণকবর খুড়া হচ্ছে এবং তাদের সেখানেই সমাহিত করা হচ্ছে।