এইচ এম রাসেল, বিশেষ প্রতিনিধিঃ
ন্যায্য মুল্যের চাল বিতরনকে কেন্দ্র করে মাসুম বিল্লাহ নামের একজন শিক্ষককে নারী ইউপি সদস্য নুপুর আক্তারের স্বামী মনোয়ার সিকদার ও তার সহযোগীরা রড দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর জখম করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আহত স্কুল শিক্ষক এমন অভিযোগ করেছেন।
আহত শিক্ষককে স্বজনরা উদ্ধার করে বৃহস্পতিবার রাতে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি করেছে। ঘটনা ঘটেছে বৃহস্পতিবার বিকেলে তালতলী উপজেলার ছোটবগী বাজারে। শিক্ষক মাসুম বিল্লাহকে মারধরের ঘটনায় এলাকায় ও কমডেকা বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। তারা ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি দাবী করছেন।
জানাগেছে, গত ১০ বছর ধরে তালতলী উপজেলার ছোটবগী ইউনিয়নের ন্যায্য মুল্যের চাল ডিলার ছোটবগী বাজারে বসে বিতরন করতো। উপকারভোগীদের সুবিধার্থে ডিলার হারুন তালুকদার এ মাসের চাল ইউনিয়নের মধ্যবর্তী স্থান গাবতলী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বিতরনের উদ্যোগ নেয়। ওই অনুসারে গত বুধবার চাল ওই বিদ্যালয়ে এনে রাখে। কিন্তু এতে রাজি হয়নি ছোটবগী ইউনিয়ন পরিষদের নারী ইউপি সদস্য নুপুর আক্তারের স্বামী মনোয়ার সিকদার ও তার লোকজন। বৃহস্পতিবার ডিলার হারুন তালুকদার চাল বিতরন শুরু করেন। এমন মুহুর্তে ইউপি সদস্য নুপুর আক্তারের স্বামী মনোয়ার সিকদারের নেতৃত্বে ২০/২৫ জন যুবদল নেতাকর্মী এসে চাল ছিনিয়ে নিতে শুরু করে। এতে বাঁধা দেয় ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ড সদস্য মোঃ জাহিদুল ইসলাম মোল্লাসহ গাবতলী গ্রামের লোকজন। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে কথা কাটাকাটি ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।
পরে চাল বিতরন বন্ধ হয়ে যায়। ওই সময় কমডেকা বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক মোঃ মাসুম বিল্লাহ দুই পক্ষকে শান্ত করে এবং ঘটনার মিমাংশা করে দেন। কিন্তু মনোয়ার সিকদার ও তার লোকজন এতে শান্ত হয়নি। ওইদিন বিকেলে শিক্ষক মাসুম বিল্লাহ ছোটবগী বাজারে গেলে নারী ইউপি সদস্যের স্বামী মনোয়ার সিকদার তার সহযোগী কামরুল, আলমগীর সিকদার ও জহিরুল মোল্লা, বেল্লাল, রফিক সিকদার ও জব্বার প্যাদা তাকে লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর জখম করে। এতে তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম হয়। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে তালতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। ওই হাসপাতালের চিকিৎসক ডাঃ একেএম মনিরুল ইসলাম তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে প্রেরন করেছে। ওইদিন রাতেই স্বজনরা তাকে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি করেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বলেন, মনোয়ার সিকদারের নেতৃত্বে কয়েকজন যুবদল নেতাকর্মী মিলে শিক্ষক মাসুম বিল্লাহকে লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে আহত করেছে।
আহত মাসুম বিল্লাহ বলেন, আমি ছোটবগী বাজারে যাওয়ার পরপরই নারী ইউপি সদস্য নুপুর আক্তারের স্বামী মনোয়ার সিকদার, তার সহযোগী কামরুল, আলমগীর সিকদার, জহিরুল মোল্লা, রফিক সিকদার, জব্বার প্যাদা ও বেল্লাল আমাকে লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর জখম করেছে।
আমি এ ঘটনায় সন্ত্রাসীদের শাস্তি দাবী করছি।
ইউপি সদস্য মোঃ জাহিদুল ইসলাম মোল্লা বলেন, উপকারভোগীদের সুবিধার্থে ডিলার হারুন তালুকদার গাবতলী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাল বিতরনের সিধান্ত নেয় এবং চাল এনে রাখে। বৃহস্পতিবার চাল বিতরন শুরু করলে নারী ইউপি সদস্য নুপুর আক্তারের স্বামী মোঃ মনোয়ার সিকদার, তার সহযোগী কামরুল, আলমগীর সিকদারসহ ২০-২৫ জন যুবদল নেতাকর্মী এসে চাল ছিনিয়ে নিয়ে যেতে চেষ্টা করে।
এতে স্থানীয়রা বাঁধা দিলে কথা কাটাকাটির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার জের ধরে শিক্ষক মাসুম বিল্লাহকে ছোটবগী বাজারে লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর জখম করেছে। আমরা এ ঘটনার শাস্তি দাবী করছি।
নারী ইউপি সদস্য নুপুর আক্তারের স্বামী মনোয়ার সিকদার শিক্ষককে মারধরের কথা অস্বীকার করে বলেন, আমি ওই শিক্ষককে মারধর থেকে রক্ষা করতে গিয়েছি। এখন আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলছে আমি তাকে মারধর করেছি।
তালতলী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ একেএম মনিরুল ইসলাম বলেন, আহত শিক্ষককে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে প্রেরন করা হয়েছে।
তালতলী থানার ওসি কালাম খাঁন বলেন, এ বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।