ইউক্রেন সংঘাতকে প্রথমবারের মতো ‘যুদ্ধ’ বলে স্বীকার করলেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।গত ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে হামলা শুরুর পর মস্কোর পক্ষ থেকে একে ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ বলে তুলে ধরা হচ্ছিল।
গত বৃহস্পতিবার মস্কোতে জনসম্মুখে প্রথমবার তিনি যুদ্ধ কথাটি বলেন।
সিএনএনের খবরে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার পুতিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য হলো এ যুদ্ধের অবসান ঘটানো। এ জন্য আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এ যুদ্ধ পুরোপুরি শেষ হোক, তা আমরা নিশ্চিত করতে চাই, আর তা যত দ্রুত হয়, ততই মঙ্গল।’
পুতিনের সমালোচকেরা বলে আসছেন, গত মার্চ মাসের পর থেকে ইউক্রেন সংঘাতকে যুদ্ধ বলা রাশিয়ায় অপরাধ হিসেবে দেখা হচ্ছে। ওই সময় পুতিন একটি সেন্সরশিপ আইনে সই করেছিলেন, যাতে ইউক্রেনে হামলা-সম্পর্কিত কোনো ভুয়া তথ্য ছড়ালে ১৫ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়। তাই এই প্রথম পুতিনের নিজে থেকে এ সংঘাতকে যুদ্ধ হিসেবে উল্লেখ করার বিষয়টি কারও দৃষ্টি এড়ায়নি। রাশিয়ার যুদ্ধবিরোধী এক নেতা বলেছেন, সেনাবাহিনী নিয়ে ভুয়া তথ্য ছড়ানোর অভিযোগে এখন পুতিনের বিচার করা হোক।
নিকিতা ইউফেরেভ নামের ওই রাজনীতিবিদ টুইটারে বলেন, বিশেষ সামরিক অভিযান শেষ করার কোনো ডিক্রি জারি হয়নি। কোনো যুদ্ধ ঘোষণাও করা হয়নি। কয়েক হাজার মানুষ ইতিমধ্যে যুদ্ধ নিয়ে এ ধরনের কথাবার্তার জন্য নিন্দা জানিয়েছেন।
একজন মার্কিন কর্মকর্তা সিএনএনকে তাদের প্রাথমিক মূল্যায়নে বলেছেন, পুতিনের মন্তব্য অনিচ্ছাকৃত। তিনি মুখ ফসকে বলে ফেলেছেন। তবে তারা ভবিষ্যতে ক্রেমলিনের কথাবার্তা ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করবেন।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রুশ বাহিনীর হামলা শুরুর পর থেকে হাজারো মানুষ নিহত হয়েছেন। কোটি কোটি ডলারের অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে ঐতিহাসিক সফর শেষে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি দেশে ফিরেছেন। মার্কিন কংগ্রেসে দেওয়া ভাষণে জেলেনস্কি বলেন, যুদ্ধে তার দেশকে সহায়তা করার মানে হলো আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা ও গণতন্ত্র নিশ্চিতের জন্য বিনিয়োগ করা। জেলেনস্কির যুক্তরাষ্ট্র সফরের পরপরই পুতিন ইউক্রেন সংঘাত নিয়ে তার মন্তব্য করেন।
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, আলোচনার মধ্য দিয়ে ইউক্রেন যুদ্ধের দ্রুত অবসান চায় তার দেশ। তবে পুতিনের অভিযোগ, কিয়েভ ও ওয়াশিংটন তাতে সাড়া দিচ্ছে না। বরং রাশিয়াকে দুর্বল করে দিতে ইউক্রেনকে যুদ্ধক্ষেত্র হিসেবে ব্যবহার করছে যুক্তরাষ্ট্র।
পুতিন বলেন, ‘আমরা আলোচনার প্রস্তাব কখনোই প্রত্যাখ্যান করিনি। বরং ইউক্রেনের নেতৃত্ব প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। কিন্তু যত তাড়াতাড়ি তারা আলোচনার বিষয়টি উপলব্ধি করবে, ততই ভালো।’
পুতিন এবং রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু গত বুধবার বলেছেন, ক্রেমলিন সামরিক বাহিনীতে আরও ব্যয় বাড়াচ্ছে। এর মধ্যে সেনাসংখ্যা বৃদ্ধি করা, নতুন অস্ত্র কর্মসূচি ও নতুন প্রজন্মের হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।