যেন আগের ম্যাচের উল্টোটা দেখিয়েছে বাংলাদেশ। আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডে ম্যাচে ৭ উইকেটে জয় পেয়েছে টাইগাররা।
সিরিজ আগেই নিশ্চিত হয়ে যাওয়ায় এই জয় যদিও সান্ত্বনার, তবুও বড় লজ্জা থেকে বাঁচা গেছে। রক্ষা পাওয়া গেছে হোয়াইটওয়াশ থেকে।
মঙ্গলবার (১২ জুলাই) চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের এ ম্যাচে ১২৬ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ১৫৯ বল বাকি থাকতেই জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় টাইগাররা।
কিন্তু স্বল্প রানের লক্ষ্য, সহজ সমীকরণ, তবুও প্রত্যাশা মেটাতে ব্যর্থ উদ্বোধনী জুটি। ২ রানেই থামে তাদের দৌড়। তিনে নেমে শান্তও দিতে পারলেন না স্বস্তি। তাই সহজ লক্ষ্যও যেন অস্বস্তিকর হয়ে উঠে স্বাগতিকদের জন্যে। তবে শঙ্কার কালো মেঘ দূর করে দেন লিটন দাস। সঙ্গী হিসেবে পেয়েছিলেন সাকিব আল হাসানকে। দু’জনের সাবলীল এক জুটিতে জয় সহজ হয় বাংলাদেশের।
এদিকে, নাইম শেখ ব্যর্থতার বৃত্তেই আবদ্ধ থাকলেন সিরিজ জুড়ে। প্রথম ম্যাচে ২১ বলে ৯ রান করার পর আজ ফিরেছেন ৮ বলে ০ রানে, ফারুকীর বলে স্ট্যাম্প উড়িয়ে। প্রত্যাশার ভার টানতে পারলেন না শান্তও। ভালো শুরু করেও ১১ করে ফিরলেন তিনি, তাকেও ফেরান ফারুকী। মোট ২৪ রান তার সম্বল। স্ট্রাইক রেট ৬৬।
জোড়া উইকেট হারিয়ে শঙ্কার কালো মেঘ দেখা দিয়েছিলো বটে, তবে টের পেতে দেননি সাকিব-লিটন জুটি। চট্টগ্রামে অনায়াস ব্যাটিং করছেন দুজন। চোখের পলকেই ৫০ রান উঠে গেল জুটিতে, সেটিও ৫০ বলেই। তবে আরো ১১ বলে ১১ যোগ করতেই নাবির শিকার হয়ে ৬১ রানের জুটি ভেঙে ফেরেন সাকিব।
ইনিংসটা টানতে পারেননি সাকিব। তবে যতক্ষণ মাঠে ছিলেন, আলো কেড়ে নিলেন সবটাই। দেখা গেলো সেই সাবলীল সাকিবকে, যাকে খুঁজে ফিরছিল সবে। তবে এমন বিদায় চায়নি কেউ, চাননি সাকিবও। আউট হয়ে যাবার বেলায় তার অভিব্যক্তিতেই তা পরিষ্কার, ৩৯ বলে ৩৯ করে ফিরলেন বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডার।
তবে যাওয়ার আগে যা করার তাই করে গেছেন। আরো একটা রেকর্ড গড়ে গেছেন, ছুঁয়েছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১৪ হাজার রানের মাইলফলক। যার সুবাদে ক্রিকেট ইতিহাস এমন কারো দেখা পেলো, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১৪ হাজার রান আর ৬০০ উইকেট আছে যার! অর্থাৎ সাকিব ছাড়া এই কীর্তি নেই আর কারো। সেই সাথে দলের জয়টা হাতের মুঠোয় এনে দিয়ে গেছেন।
বাকি কাজটা লিটন দাসই সারলেন। অধিনায়ক লিটন অধিনায়কোচিত একটা ইনিংস খেললেন। সেই শুরু থেকে শেষ, একপ্রান্ত আগলে রেখে পুরোটা পাড়ি দিলেন। সেই সাথে ছন্দ হারানোর যেই প্রশ্ন উঠছিল তাকে ঘিরে, তার জবাবও যেন দিয়ে দিলেন। দলের জয় যখন নিশ্চিত করে ফিরলেন তখন তিনি অপরাজিত ৬০ বলে ৫৩ রানে।
সাকিব আউট হলে লিটনকে সঙ্গ দেন তাওহীদ হৃদয়। বাউন্ডারি হাঁকিয়ে জয় নিশ্চিত করেন তিনিই। অপরাজিত থাকেন ১৯ বলে ২২ রানে।
এর আগে উড়তে থাকা আফগানিস্তানকে মাটিতে নামিয়ে আনে বাংলাদেশ। হোয়াইটওয়াশের শঙ্কা নিয়ে খেলতে নেমে আফগানিস্তানকে থামিয়ে দিয়েছে ১২৬ রানে।
চট্টগ্রামে আগে ব্যাট করতে নেমে আফগানিস্তান পাওয়ার প্লেতে যোগ করে মোটে ২১ রান, তবুও ৪ উইকেট হারিয়ে! যার নেপথ্য কারণ শরিফুল। একাই ৩ উইকেট তুলে নেন তিনি; প্রথম স্পেল ৫-১-৮-৩!
পাওয়ার প্লেতে আফগানদের ২১ রানের ভেতরে ৭ রান আসে অতিরিক্ত খাত থেকে। তাছাড়া ৬০ বল খেলে মোটে ৮টি বল থেকে রান বের করতে পেরেছে তারা, ডট দেয় ৫২টি! এই ছোট পরিসংখ্যানই বলে দেয় কতটা ভুগেছে আজ সফরকারীরা।
আগের ম্যাচে উদ্বোধনী জুটিতে ২৫৬ রান তুলেছিল আফগানিস্তান। আজও ভয় ছিল এমন কিছু হবে না তো! সেই সুযোগও দেননি শরিফুল। মাত্র তৃতীয় ওভারেই ভাঙেন উদ্বোধনী জুটি। অফ স্টাম্পের বাইরে ফাঁদে ফেলেন ইবরাহিম জাদরানকে। আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান বলে খোঁচা দিলে তা সরাসরি চলে যায় উইকেটের পেছনে মুশফিকুর রহিমের গ্লাভসে। ৩ রানেই ভাঙে আফগানিস্তানের উদ্বোধনী জুটি।
প্রথম উল্লাসের রেশ না কাটতেই দ্বিতীয়বার উল্লাসে মাতান শরিফুল। একই ওভারেই ফেরান তিনে নামা রহমত শাহকে। শূন্য রানে ফেরেন এই আফগান ব্যাটার। তিনিও ফেরেন মুশফিকের হাতে ক্যাচ দিয়ে। আর তাতে ৩ রানেই ২ উইকেট হারায় আফগানিস্তান।
এরপর ষষ্ঠ ওভারে তাসকিনের আঘাত। প্রথম চার বল ডট দেয়ার পর পঞ্চম বলে পুল করতে চেয়েছিলেন গুরবাজ। তবে তাসকিনের বাউন্সার ব্যাটে ছোঁয়া লেগে চলে যায় পেছনে, মুশফিকের গ্লাভসে। আগের ম্যাচে ১৪৬ রানের ইনিংস খেলা গুরবাজ আউট হন ২২ বলে ৬ রান করে।
এরপর টিকে থাকার লড়াইয়ে দাঁতে দাঁত চেপে থাকে আফগানিস্তান। একটু থিতু হতে একের পর এক দিতে থাকে ডট। তবুও শেষ রক্ষা হয়নি, মোহাম্মদ নাবকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন শরিফুল। মোটে ১৫ রানে ৪ উইকেট হারায় সফরকারীরা।
১১তম ওভারে ইনিংসে প্রথমবারের মতও এসেছেন মেহেদী মিরাজ। পরের ওভারে আনা হয়েছে সাকিব আল হাসানকেও। তবে চাপ সামলে উঠতে পারেনি সফরকারীরা। এই দুই স্পিনারকেও স্বাভাবিকভাবে খেলতে পারেনি। তবুও নাজিবুল্লাহ-শাহিদি জুটি খানিকটা ফুসরত খুঁজে নিয়েছিল ৪৬ বল থেকে ১৭ রান বের করে।
তবে এবার বাঁধা হয়ে দাঁড়ান সাকিব। নাজিবুল্লাহ জাদরানকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডার। ২২ বলে ১০ রান করেন তিনি। হাশমতুল্লাহ শাহিদি ফেরেন আরো ২১ রান যোগ করে৷ তিনিও ধরাশায়ী হন স্পিনে, তাইজুলের শিকার হয়ে ফেরেন ২২ রান করে।
এরপর ফের শরিফুলের আঘাত। দ্বিতীয় স্পেলে এসেই ফেরান অভিষিক্ত আব্দুল রহমানকে। ৬৮ রানে ৭ উইকেট হারায় আফগানিস্তান। তবে এক প্রান্ত আগলে রেখে একাই লড়তে থাকেন আজমতুল্লাহ ওমরজাই। আরেক অভিষিক্ত জিয়াকে নিয়ে অষ্টম উইকেট জুটিতে ৫৩ বলে ২১ রান যোগ করেন ওমরজাই। জিয়া আউট হন ৩০ বলে ৫ রানে।
ওমরজাইয়ের ব্যাটে ভর করেই তিন অংকের ঘরে পৌঁছায় আফগানিস্তানের ইনিংস। নিজেও তুলে নেন অর্ধশতক। শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হওয়ার আগে ৭১ বলে ৫৭ রানের ইনিংস খেলেন তিনি। তাকে ফেরান তাসকিন। এত আগে ৩৪ বলে ১১ করে তাইজুলের দ্বিতীয় শিকার হন মুজিবুর। ৪৫.২ ওভারে ১২৬ রানে অলআউট হয় আফগানিস্তান।
সাকিবের আজকের বোলিং ফিগার ১০-১-১৩-১, ৬০ বলের ৪৮ বলই করেছেন ডট বল। ইকোনমি ১.৩। তবে দলের সবচেয়ে সফলতম বোলার শরিফুল ইসলাম। ৯ ওভারে ২১ রান দিয়ে ৪ উইকেট নেন তিনি। তাসকিন ২৩ রানে ২ ও তাইজুল নেন ৩৩ রানে ২ উইকেট। অন্যটি যায় মিরাজের ঝুলিতে।