ঢাকা

চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ুয়া শিশুটি এখন দশ মাসের অন্তঃসত্ত্ব,নিজের গর্ভে বড় করছে আরেক শিশুকে

তুর্থ শ্রেণিতে পড়ুয়া শিশুটি এখন দশ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। শৈশবের গণ্ডি না পেরোনো এই শিশু নিজের গর্ভে বড় করছে আরেক শিশুকে। সন্তান প্রসবের সময় এগিয়ে আসায় শারীরিক-মানসিক পরিবর্তনে বিপর্যস্ত জীবন তার। শ্যামলা গড়নের মুখটা কালো কুচকুচে হয়ে গেছে।

শিশুটির পরিবার জানিয়েছে, ধর্ষণের ঘটনায় শিশুটির দাদি বাদী হয়ে ১৮ জুন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করেন ধর্ষক জাহিদুল খাঁর (৫৫) বিরুদ্ধে। তবে ধর্ষককে এখনো গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। জাহিদুল খাঁ গুরুদাসপুর উপজেলার ধারাবারিষা ইউনিয়নের দক্ষিণ নাড়িবাড়ি গ্রামের কালু খাঁর ছেলে। ঘটনার পর থেকে পলাতক।

হতাশাগ্রস্ত শিশুটি কেবলই ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। অথচ বিদ্যালয়ের সহপাঠীদের সঙ্গে এখন তার শৈশব রাঙানোর কথা ছিল। কথা ছিল চতুর্থ শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার। কিন্তু জোরপূর্বক ধর্ষণের শিকার হয়ে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়া শিশুটি সপ্তাহ খানেকের মধ্যে আরেক শিশুর জন্ম দেবে। ১১ বছর বয়সে মা হবে শিশুটি। তবে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে জন্ম নেওয়া শিশুর পিতার পরিচয় নিয়ে। 

মঙ্গলবার (২২ আগস্ট) বিকালে বাড়িতে বসে শিশুটি ঘটনার দিন শুক্রবার ছিল। দুপুরে গোসলের পর বাড়ির ভেতর কাপড় পরিবর্তন করছিল সে। বাড়িতে কেউ না থাকার সুযোগে ধর্ষক জাহিদুল পেছন থেকে তাকে জাপটে ধরে মুখে গামছা পেঁচিয়ে ধর্ষণ করেন। বিষয়টি কাউকে জানালে গলা কেটে হত্যার হুমকিও দেন। ওই ঘটনায় সে দুইদিন অসুস্থ ছিল। ভয়ে বাড়ির বাহিরে যাওয়া হয়নি।

শিশুটির চাচি জানান, ঘটনার সাত মাস পর শিশুটির দৌহিক পরিবর্তন দেখা দেয়। জিজ্ঞেস করলে কোনো উত্তর দেয়নি সে। তবে প্রসব পরীক্ষার পর প্রাথমিকভাবে গর্ভে সন্তান থাকার কথা জানতে পারেন তারা। এরপর স্থানীয় একটি ক্লিনিকে নিয়ে আল্ট্রাসনোগ্রাফি করার পর চিকিৎসক বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এখন প্রসবের সময় এগিয়ে আসায় শিশুটি ভীত হয়ে পড়েছে।
 
শিশুর চাচা জানান, শিশুটির পিতা-মাতা দুজনেই পৃথকভাবে বিয়ে করে অন্যত্র থাকেন। ছোট থেকে শিশুটিকে তারাই লালন পালন করছেন। স্থানীয় একটি মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ছে সে। অন্তঃসত্ত্বা হওয়ায় বিদ্যালয়ে যাওয়া এবং পরীক্ষা দেওয়া কোনোটিই হচ্ছে না।

তিনি জানান, ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পর গ্রাম্য সালিসে রফা করতে চেয়েছিলেন ধর্ষক জাহিদ। কিন্তু তা হয়নি। মামলা দায়ের হলেও আসামি গ্রেপ্তার হয়নি। এখন প্রতিবেশীদের কটুকথা শুনতে হচ্ছে তাদের।

গুরুদাসপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শ্রাবণী রায় ইত্তেফাককে জানান, এমন দুঃখজনক ঘটনা গুরুদাসপুরে এটিই প্রথম। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অন্তঃসত্ত্বা শিশুটির দায়িত্ব নেওয়া হয়েছে। অপ্রাপ্ত বয়সে মা হতে গিয়ে জরায়ু ছিঁড়ে যাওয়াসহ জরায়ুতে ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা থাকায় সরকারিভাবে সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে শিশুটির প্রসব করানো হবে।

গুরুদাসপুর থানার ওসি মো. মোনোয়ারুজ্জামান ইত্তেফাককে বলেন, আসামি পলাতক থাকায় তাকে এখানো গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। তবে অভিযান অব্যহত আছে।

নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি স্থানীয় সংসদ সদস্য আব্দুল কুদ্দুস ইত্তেফাককে বলেন, শিশুর পেটে শিশু জন্ম নেওয়ার ঘটনাটি দুঃখজনক। ধর্ষককে দ্রুত গ্রেপ্তার করতে পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তা ছাড়া মঙ্গলবার আবারও শিশুটির স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছে। নিয়মিত খোঁজ নিচ্ছেন তিনি।

Back to top button