আন্তর্জাতিকএশিয়া

কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ, দায়িত্ব পাচ্ছেন ছেলে

ক্যাম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন সেন ঘোষণা করেছেন, তিনি আগস্ট মাসের প্রথম দিকে পদত্যাগ করবেন এবং তার ছেলে হুন মানেতের হাতে ক্ষমতা অর্পণ করবেন।

৭০ বছর বয়স্ক হুনসেন এখন পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি দিন ধরে ক্ষমতাসীন নেতাদের অন্যতম। দেশটিতে একটি প্রতিযোগিতাবিহীন নির্বাচনে হুন সেনের পার্টি সবগুলো আসনে বিজয়ী হওয়ার তিন দিন পর তিনি এ ঘোষণা করেন।

এমন একটি ঘোষণা যে আসতে পারে, তা আগে থেকেই ধারণা করা হচ্ছিল।

ক্যাম্বোডিয়ায় প্রায় চার দশক ধরে ক্ষমতাসীন হুন সেনের শাসন ক্রমশঃই আরো একনায়কতান্ত্রিক হয়ে উঠছিল।

ক্ষমতা হস্তান্তরের কথা তিনি প্রথম বলেছিলেন ২০২১ সালে, তবে তা ঠিক কখন হবে তা এত দিন ধরে কেউ জানত না।

হুন সেনের বড় ছেলে হুন মানেত- সম্প্রতি রাজকীয় ক্যাম্বোডিয়ান সেনাবাহিনীর কমান্ডার ছিলেন। তাকে অনেক দিন ধরেই ভাবী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছিল।

হুন সেন তার ঘোষণায় বলেছেন, আগামী ১০ আগস্ট তার ছেলেকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ করা হবে।

দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে এক বিশেষ সম্প্রচারে তিনি বলেন, ‘আমি ঘোষণা করছি যে আমি আর প্রধানমন্ত্রীর পদে থাকব না। জনগণকে এ বিষয়টি উপলব্ধি করতে বলছি।’

তিনি বলেন, তিনি পদত্যাগ করছেন- কারণ এ পদে রয়ে গেলে তা অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করবে।

তবে হুন সেন ক্ষমতাসীন কম্বোডিয়ান পিপলস পার্টির নেতার পদে রয়ে যাবেন। যার ফলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, তার হাতেই চূড়ান্ত নিয়ন্ত্রণ থেকে যাবে।

তিনি স্পষ্ট ইঙ্গিতও দিয়েছেন যে দেশ কিভাবে চালানো হচ্ছে তার ওপর তার প্রভাব বিস্তার অব্যাহত থাকবে।

চলতি বছরের ২৩ জুলাইয়ের নির্বাচনের প্রচারাভিযানে ৪৫ বছর বয়স্ক হুন মানেত নেতৃত্বের ভূমিকায় ছিলেন। রাজনৈতিক সভাগুলোতে প্রায়ই তাকে তার বাবার পাশে দেখা যেত।

প্রচলিত রয়েছে, হুন মানেতের শাসনকাল হয়ত অপেক্ষাকৃত কম দমনমূলক হবে এবং মানবাধিকারের জন্য পশ্চিমা আহ্বানের প্রতি তিনি অধিকতর কর্ণপাত করবেন।

তবে বিশ্লেষকরা বলেন, তিনি যে অপেক্ষাকৃত উদার হবেন, এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

হুন মানেত মার্কিন সামরিক অ্যাকাডেমি ওয়েস্ট পয়েন্টে প্রশিক্ষণ পেয়েছেন এবং যুক্তরাজ্যের ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন।

দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার এক কোটি ৬০ লাখ জনসংখ্যার দেশটিতে ১৯৮৫ সাল থেকে হুন সেন ক্ষমতায় আছেন।

রোববারের নির্বাচনের ফল কী হবে তা জানাই ছিল। কারণ দেশটির একমাত্র বিশ্বাসযোগ্য বিরোধী দলকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছিল।

ব্যালট পেপারে আরো ১৭টি দল ছিল। যেগুলো খুবই ক্ষুদ্র, নতুন বা সিপিপির মিত্র রাজনৈতিক দল।

যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ উভয়েই এ ভোট অবাধ ও সুষ্ঠু কোনোটাই হয়নি বলে নিন্দাসূচক বিবৃতি দিয়েছে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে হুন সেন বিভিন্ন উপায়ে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দমন করেছেন।

২০১৭ সালে তিনি আদালতকে ব্যবহার করে সিএনআরপি নামে আরেকটি জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল বিলুপ্ত করেন এবং দলটির নেতাদের কারারুদ্ধ বা নির্বাসিত করেন।

তিনি দেশের ভেতরে স্বাধীন সংবাদমাধ্যম, অধিকার গোষ্ঠী, ট্রেড ইউনিয়ন এবং এনজিওর ওপর দমননীতি চালিয়ে ভিন্নমত ও বাকস্বাধীনতা হরণ করেছেন।

সংশ্লিষ্ট খবরগুলো

Back to top button