আবারো আশা দেখিয়েও হতাশায় মোড়ালো বাংলাদেশ। আরো একবার শেষ মুহূর্তে খেই হারিয়ে ফেলা, আরো একবার ভারতের কাছে হার। আরো একবার তীরে এসে তরি ডোবা! ভারতের বিপক্ষে যেকোনো খেলায়, যেকোনো ফরম্যাটে জয়ের পথে ছুটতে ছুটতে শেষে এসে পথ হারানো, এ যেন আমাদের অবধারিত নিয়তি! ফলে ৫১ রানে হেরে সেমিফাইনাল থেকেই বিদায় নিতে হলো টাইগারদের।
স্বল্প রানের ছোট লক্ষ্য, সহজ সমীকরণ; করতে হতো পুরো ৫০ ওভারে মোটে ২১২ রান। ফলে ততক্ষণে নিজেদের ফাইনালে দেখতে শুরু করেছে অনেকে। ফাইনালে উঠার স্বপ্ন আরো বড় হতে থাকে উদ্বোধনী জুটিতে। পাওয়ার প্লেতে বল সমান ৬০ রান তুলে ফেলেন নাইম শেখ ও তানজিদ হাসান তামিম।
শুক্রবার কলম্বোতে ইমার্জিং এশিয়া কাপের ফাইনালে উঠার লড়াইয়ে টসে হেরে ব্যাট করতে নামে ভারত। তবে মধ্যমানের সংগ্রহ তুলেই সন্তুষ্ট থাকতে হয় তাদের। বাংলাদেশী বোলারদের দাপটে গুটিয়ে যায় ৪৯.১ ওভারে ২১১ রানে। জবাবে ব্যাট করতে নেমে দারুণ শুরুর পরও মোটে ১৬০ রানে থেমে যায় বাংলাদেশের ইনিংস। ফলে সেমিফাইনাল থেকেই বিদায় নিতে হলো বাংলাদেশের।
জুটি ভাঙে ১৩তম ওভারে এসে আরো ১০ রান তোলার পর। প্রথম ওভারেই চারটি বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ইনিংস শুরু করা এই ব্যাটার থামেন ৪০ বলে ৩৮ রান করে। মাধভের বল বুঝতে না পেরে বোল্ড হন তিনি। তবে অপরপ্রান্তে তখনো হেসে চলছিল তানজিদ হাসান তামিমের ব্যাট। এক ইনিংস পর ফের জ্বলে উঠেন তিনি, তুলে নেন ফিফটি।
আসরের চার ম্যাচে যা তামিমের তৃতীয় ফিফটি। শ্রীলঙ্কা ও ওমানের পর ভারতের সাথেও স্পর্শ করলেন এই মাইলফলক। তবে ইনিংসটা বড় করতে পারেননি, থেমেছেন ৫৫ বলে ৫১ রানে। ৯৪ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারায় বাংলাদেশ। বলা যায় জয়ের পথ হারিয়ে ফেলে সেখানেই। পরের ৬৬ রান করতেই হারায় শেষ ৮ উইকেট।
জাকির হাসানকে দিয়ে ধসের শুরু শুরু, দলীয় ১০০ রানের মাথায় ১১ বলে ৫ করে ফেরেন তিনি। জয়ের সাথে ২৩ রানের জুটি গড়ে বিপর্যয় সামলে দেয়ার চেষ্টা করেন অধিনায়ক সাইফ হাসান। তবে ২৪ বলে ২২ করে তিনি ফিরতেই ভাঙে এই জুটি। এরপর মাত্র ৩৭ রান তুলতেই বাংলাদেশ শেষ ৭ উইকেট হারায়।
সৌম্য ৩ বলে ৫, আকবর আলি ৫ বলে ২, শেখ মেহেদী ১১ বলে ১২, রাকিবুল ও রিপন মন্ডল ফেরেন ০ রানে। তিনে নামা জয়ের ব্যাটে আসে ৪৬ বলে ২০ রান। বাংলাদেশ এইদিন মূলত হেরে যায় নিতিনের ফিল্ডিংয়ের কাছে। অসাধারণ তিনটি ক্যাচ নিয়ে বাংলাদেশকে ঠেলে দেন ব্যাকফুটে। ৩৪.২ ওভারেই থামে বাংলাদেশের দৌড়। নিশান্ত সিন্ধু শিকার করেন ২০ রানে ৫ উইকেট।
এর আগে কলম্বোর প্রেমাদাসায় টসে হেরে আগে ব্যাট করতে নামে ভারত। অষ্টম ওভারে দলীয় ২৯ রানে ভাঙে তাদের উদ্বোধনী জুটি। প্রথম আঘাত করেন সাকিব, ফেরান সাই সুদর্শনকে। ভয়ংকর হতে থাকা এই ব্যাটার ফেরেন ২৪ বলে ২১ রান করে। তবে দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা চালায় ভারত।
দ্বিতীয় উইকেটে ৪৬ রানের জুটি গড়ে তুলেন অভিষেক শর্মা ও নিতিন। ভারতের ইনিংসে যা সর্বোচ্চ রানের জুটি। এরপর নিয়মিতই উইকেট পেয়েছে বাংলাদেশ। অষ্টম উইকেট ইয়াশ ডুল আর মানভের ৪২ বলে ৪১ ছাড়া ভারত আর কোনো বলার মতো জুটি গড়তে পারেনি।
নিতিন ১৭ করে আউট হলে ভাঙে দ্বিতীয় উইকেট জুটি। অবশ্য আরো আগেই ফিরতেন এই ব্যাটার। রাকিবুলের বলে আকবর আলি স্টাম্পিং করলে প্রথমে আউট দিলেও পরে সিদ্ধান্ত বদলে দেন টেলিভশন আম্পায়ার। যদিও ইনিংস বড় করা হয়নি তার। আরেক ব্যাটার অভিষেক ফেরেন ৬৩ বলে ৩৪ করে।
৭৯ রানে ৩ উইকেট হারানো ভারত ৭ উইকেট হারায় ৩৭ ওভারে ১৩৭ রানে। ভারতকে এইদিন একাই টেনেছেন চারে নামা অধিনায়ক ধুল। শেষ ওভারে আউট হবার আগে তুলে নেন অর্ধশতক। ৮৫ বলে ৬৬ রান আসে তার ব্যাটে। তবে মিডল অর্ডারে নিশান্ত শর্মা, ধ্রুব জুড়েলরা পারেনি তাকে সঙ্গ দিতে।
শেষ দিকে মানভের ২৪ বলে ২১ আর রাজবন্ধনের ১২ বলে ১৫ রানে দুই শ’র ঘর পাড়ি দেয় ভারত। তাদের ইনিংস থামে ২১১ রানে। দুটো করে উইকেট নেন শেখ মেহেদী, তানজিম সাকিব ও রাকিবুল। একটি করে যায় রিপন মন্ডল, সাইফ হাসান ও সৌম্য সরকারের ঝুলিতে।